প্রচ্ছদ / ক্যাম্পাস / “ভর্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা”

“ভর্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা”

নাহিদুল আলম হৃদয় ( শিক্ষার্থী, চবি)

রাজিব ভাইয়ের মাধ্যমে শাহজালাল হলের গণরুমে থাকার ব্যাবস্থা হলো।বিবিএর প্রতি একটা এক্সট্রা এট্রাকশন থাকায়, আগে থেকেই সাধারণ জ্ঞানকে অবহেলা করায় ডি ইউনিটের পরিক্ষা টাও ভালো হয়নি।তাই সি ইউনিটই ছিল মহামূল্যবান অপরচুনিটি।

৩০ অক্টোবর ২০১৯,দিনটি ছিল বুধবার। ভোরে ঘুম থেকে উঠে হলের মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করলাম। গণরুমে এসে দেখলাম কেউ শেষ বারের মতো বইতে চোখ বুলচ্ছে, কেউ আবার নাক ডেকে ঘুমচ্ছে।বন্ধু আলামিন,অভিজিৎ, রবি,জাবেদসহ বাকিরাও আমার সাথে নামাজ সেরে আসলো।আমাদের সবার মুখেই দুশ্চিন্তার ছায়া।সকাল ৭ টাতেই ফোনে আম্মু,আব্বুর কাছ থেকে দোয়া নিয়ে নিলাম।

কিছুসময় পর একটা কালো শার্ট, হাল্কা নীল রঙ্গের জিন্স আর একজোড়া স্লিপার পরে রুম থেকে বের হলাম পরিক্ষার হলের উদ্দেশ্য। আমার সিট পড়েছে বিজনেস ফ্যাকাল্টি ভবনের ৩য় তলায়। কম্পিত হৃদয়ে হল থেকে বের হয়ে জিরো পয়েন্ট যেতে আমার সময় লেগেছিল প্রায় ৭ মিনিট।ভিড় ঠেলে সামনে এক পা দেওয়াই যেন দায়!হাজার হাজার পরিক্ষার্থীর সাথে আমিও গুটিগুটি করে হাঁটা শুরু করলাম কাটাপাহাড় রাস্তা ধরে। রাস্তার পাশ থেকে বই নিয়ে শেষ ত্রিশ মিনিট চোখ বুলিয়ে হলেও চান্স নামক সেই সোনার হরিণ পেতে অনেকেই ভুল করেনি।আর এইদিকে আমি রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে সামনে এগুচ্ছি আর ভাবছি আমি পারবো তো!এতো পরিশ্রম বৃথা যাবে নাতো!এভাবে স্বপ্নগুলো ধূলিসাৎ হওয়া টাও কি আমি মেনে নিবো! পরে ভাবলাম, না।আমি পারবো,পারবোই।কথাটা বলে স্বত্বাকে সাহস দিলাম, সে স্বস্তি পেলো।কিন্তু চোখটা উঠিয়ে যখন হাজার খানেক হাতে ফাইল ওয়ালা মুখ দেখলাম, বুকটা আবার কেঁপে উঠলো, মনে হচ্ছিল হার্টবিটটা যেন বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে। এভাবে আশা হতাশা নিয়ে ভিড়ে গা ভাসিয়ে একসময় আমিও পৌঁছে গেলাম বিবিএ বিল্ডিংয়ের সামনে। হলে ঢোকার আরো ৩০ মিনিট বাকি আছে জেনে ফ্যাকাল্টির সামনে বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর বন্ধু অনিক এসে পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বসলো আর বললো “মামা আমগো কপাল! ” অনিকের সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢোকার পারমিশন দিয়ে দেওয়া হলো।শুভকামনা দেওয়া নেওয়া করে অনিককে ১ম তলায় রেখে আমি তৃতীয় তলায় গেলাম। যথাস্থানে বসে চারদিকে তাকিয়ে বুঝলাম অনেকেই আমার মতো।সবাই অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে।তারপরও মনে সাহস রেখে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলাম। যাইহোক সময় মতো টিচার্সরা সকলের ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাদী সামনে রাখতে বললেন। আমিও ব্যাগ রেখে এসে সিটে বসলাম। প্রশ্ন পাওয়ার পর চারপাশে শেষবার তাকিয়ে ওএমআর দাগানো শুরু করি।অল্পসময়েই বুঝতে পারলাম আল্লাহ চাইলে এখানে হয়তো ভালোকিছু হতে পারে। ১ ঘন্টার যুদ্ধ শেষ করে শাহজালাল হলে ফিরে বন্ধু আলামিনের সাথে মিলিয়ে আত্মবিশ্বাস কিঞ্চিৎ বৃদ্ধি করে আম্মুকে কল দিয়ে জানালাম আর শুধু আপনার দোয়াটা লাগবে। ঐদিন বিকেলে কুমিল্লার উদ্দেশ্য চবি ছাড়লাম।আর বের হওয়ার সময় পেছন ফিরে সেন্ট্রাল গেইটকে বললাম হয়তো আবার দেখা হবে।

দুইদিন পর সকাল ৭ টায় বন্ধু তানবীর কল দিলো।সে ৬৪ তম হয়েছে জানিয়ে আমাকে রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার তথ্য দিলো।ধুকধুক করা বুকে কম্পিত হাত দিয়ে মোবাইল টিপে রেজাল্ট বের করা যে আমার জন্য কতটা আতংকের কাজ ছিল তা আর না বলি।

আলহামদুলিল্লাহ।
হাজারো স্বপ্নসারথির সাথে ওইদিন চবি আমাকেও স্বাগত জানালো।

তাই আজ আমি বলি,আমার পরিচয় আমি চবিয়ান।
একজন গর্বিত চবিয়ান।

এছাড়াও চেক করুন

প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধু টানেলে টোল দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা …