প্রচ্ছদ / প্রচ্ছদ / আলোর প্রদীপ মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইন ২০১৯ জনমত জরিপ প্রতিবেদন

আলোর প্রদীপ মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইন ২০১৯ জনমত জরিপ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আমরা আজ এমনই এক রূঢ়, নিষ্ঠুর সময়ের মুখোমুখি এসে দাড়িয়েছি। শিকার হয়েছি এক গভীর ষড়যন্ত্রের। যুদ্ধের বিজ্ঞান আজ জটিল থেকে জটিলতম। জীবানু যুদ্ধ, রাসায়নিক যুদ্ধের পর এবার নেশার যুদ্ধ। এ নেশা মাদকের। এই নেশার কবলে পড়েছে হাজার হাজার তরুন। এমনি করেই চলছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মৃতকল্প,অসাড় করে দেয়ার পরিকল্পনা। তরুন যুবশক্তিই দেশের প্রাণ। ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে,শহরতলীতে,গ্রামে-গ্রামান্তরে। গোটা দেশের ন্যায় অত্র বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলাটিও মাদকের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ভাইরাসের ন্যায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে অত্র উপজেলাতে। এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কল্যাণে মাদক ব্যবস্যা যেমন জমজমাট, ঠিক তেমনি এলাকার উঠতি তরুন সমাজও আকৃষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এসব মাদকদ্রব্যর মধ্যে বর্তমানে হেরোইন ও ইয়াবার বিস্তার ও ব্যবহার এতোটাই ভয়াবহ সর্বগ্রাসী রূপ ধারন করেছে যে,উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহন না করলে এর ভয়াবহ পরিনতি যে কি হবে তা বলা প্রায় অসম্ভব। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আলোর প্রদীপ পরিবার দীর্ঘ ১১ বছর যাবত মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০১৪ সালে সমগ্র সোনাতলা উপজেলায় মাদকবিরোধি ক্যাম্পেইন পরিচালনার মধ্যে দিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমকে আরো ব্যাপক পরিসরে বেগবান করতে প্রয়াস চালায়।

এই বছরের শুরুতেই সোনাতলা উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসন, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ,সাংবাদিক,পুলিশ প্রশাসন সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় মাসব্যাপী সমগ্র উপজেলাকে ৬টি ভেন্যুতে বিভক্ত করে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়। এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে গিয়ে আলোর প্রদীপ পরিবার এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আলোর প্রদীপ মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইন ২০১৯ এর মাধ্যমে ৬টি ভেন্যুর (সোনাতলা সদর ইউনিয়ন ও পৌর, বালুয়াহাট, মহিচরন-কর্পূর, পাকুল্লাহ, হরিখালি-তেকানীচুকাইনগর,ভেলুরপাড়া-চরপাড়া-কলেজস্টেশন) জনসাধারণের নিকট মাদকের নানান বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উক্ত তথ্যর উপর ভিত্তি করে অত্র উপজেলার মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি মাদক বিক্রেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছে (মাদক বিক্রেতাদের তালিকা বর্তমানে প্রকাশ করা হচ্ছে না)।

জনস্বার্থে অত্র উপজেলার মাদক সংক্রান্ত কিছু তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপন করা হলোঃ- উপস্থাপিত সকল তথ্য সংগঠনের নিজস্ব জরিপ ও অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে তৈরিকৃতঃ- সোনাতলা উপজেলার মোট জনসংখ্যাঃ- ১,৬৭,৫৪৭ জন প্রায় । পুরুষঃ- ৮৫,৮৬২ জন (প্রায়) । নারীঃ- ৮২,৩৪১ জন (প্রায়) । জরিপে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাঃ- ১৬৭ জন। তারমধ্যে ২০-৫০ বছর বয়সী – ১৪৬ জন। ৫১-৮০ তদুর্ধ বয়সী – ১৬ জন। ২৬-৩৭ বছর বয়সী ব্যক্তিদের তথ্য প্রদানের প্রবনতা সবচেয়ে বেশি। ১। অত্র উপজেলায় মোট ধূমপায়ীর সংখ্যা ( মোট জনসংখ্যার উপর পরিচালিত জরিপের গড় হিসাব) ৬৩.৩৯% শতাংশ প্রায় । ২। ইয়াবা সেবীর সংখ্যাঃ- ০.৪৮% শতাংশ প্রায় । ৩। ড্যান্ডি নামক মাদকসেবীঃ- ০.৯% শতাংশ প্রায় (তবে এই মাদক সেবীদের মধ্যে ১২-১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যাই অধিক) । ৪। হেরোইন সেবীর সংখ্যাঃ- ০.৩৯% শতাংশ প্রায় । ৫। ইয়াবা ও হেরোইন দুটোতেই আসক্তঃ- ০.৫৬% শতাংশ প্রায় । ৬। ফেন্সিডিল সহ অন্যান্য মাদক সেবীর সংখ্যাঃ- ০.৩৫% শতাংশ প্রায় । মোট মাদক সেবীর সংখ্যা (ধূমপায়ীর সংখ্যা বাদ দিলে) – ২.৬৮% শতাংশ প্রায় ।

বিক্রিত মাদকের ধরনঃ- ৫ প্রকার । মাদক বিক্রির স্থান (ভ্রাম্যমান বাদে) – সোনাতলার প্রায় ১৯ টি পয়েন্ট সহ ভ্রাম্যমান মাদকচক্র সক্রিয়ভাবে তাদের ব্যবস্যা চালিয়ে যাচ্ছে । এর সাথে কিছু লোভী সাধু সুশীল আর অসাধু প্রশাসনিক কর্মচারীদের ম্যানেজ করে চলছে এসব ব্যবস্যা । প্রাপ্ত তথ্যর ভিত্তিতে মাদক ব্যবস্যার কেন্দ্র সমূহঃ- ১। মহিচরন ২। কর্পূর ৩। হরিখালি (হাঁসরাজ) ৪। করমজা বাজার ৫। তেকানী চুকাইনগর (মহেশপাড়া,মধ্যেপাড়া,কাছারি বাজার,মুন্সিপাড়া) ৬। পাকুল্লাহ বাজার (উল্লেখযোগ্য ব্যাপক মাদক বিক্রিত এলাকা) ৭। সুজাইতপুর ৮। বালুয়াহাট (কৃঞ্চচন্দ্রপুর,গোয়ালপাড়া,রশিদপুর) ৯। কামারপাড়া ১০। গড়ফতেহপুর ১১। কাবিলপুর ১২। রানীরপাড়া ১৩। কলেজস্টেশন (ঠাকুরপাড়া) ১৪। চরপাড়া বাজার ১৫। সোনাতলা রেলস্টেশন এছাড়াও আমাদের তথ্যর বাইরে আরো কেন্দ্র থাকতে পারে বলে আমরা মনে করি ।

মাদক প্রতিরোধে সংগঠনের কতিপয় সুপারিশমালাঃ- ১। প্রত্যক জুম্মার নামাজের খুৎবার আগে অথবা পরে অন্তত ৩/৪ মিনিট ইমামের মাধ্যমে মাদকের নানাবিদ কুফল সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করা । অর্থ্যাৎ জনসাধারন যেন বুঝতে বা আমলে নিতে সক্ষম হয় মাদক একটি মারাত্বক সমস্যা আমাদের প্রত্যকের জন্য । ২। জনবহুল স্থানে মাদকের কুফল সম্পর্কে ও মাদক বিক্রেতার আইনত শাস্তির ধরন এবং মাদক সেবীদের সাজার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ পূর্বক জনসচেতনতা মূলক প্যানা টাঙ্গানো । ৩। সপ্তাহে অন্তত একবার মাইকে মাদকের কুফলতা সম্পর্কে প্রচার ও হাতে হাতে প্রচারপত্র বিলিকরন। ৪। জনবহুল স্থানে মাদক বিরোধী পথ নাটক,ডকুমেন্টরি প্রদর্শনের ব্যাবস্থা করা । ৫। বিভিন্ন রাজনৈতিক শুভেচ্ছা স্বম্বলিত প্যানায় মাদক বিরোধী শ্লোগান সংযুক্ত করে প্রচার । ৬। স্কুল,কলেজ গুলোতে মাদক বিরোধী ক্যাম্পেইন পরিচালনা । ৭। প্রবন্ধ,রচনা,চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন সহ নানামূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিকাশ । ৮। নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন ও মাদকবিরোধী প্রচারনা চালানো । ৯। চিহ্নিত মাদক সেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত উদ্যাগের মাধ্যমে পর্যবেক্ষন,চিকিৎসা ও পূর্ণবাসনের ব্যাবস্থা করা । ১০। দলমত নির্বিশেষে সকল মাদক বিক্রেতা ও মাদক এর ডিলারদের গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান । এবং পরবর্তিতে তাদের জীবনযাপনের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা ।

এছাড়াও চেক করুন

প্রথম ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধু টানেলে টোল দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টোল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *