সিএন নিউজ২৪.কম, নিজস্ব প্রতিনিধি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, বায়ু দূষণের নগরি ঢাকাকে বাসযোগ্য ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আগামী পহেলা ফেব্রæয়ারী ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য নগরবাসরি প্রতি আহŸান জানান। তিনি বলেন, ভোটবিহীন সরকার বুঝতে পেরেছে জনগণ তাদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তাই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে পরিকল্পিতভাবে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) সিটি নির্বাচনী প্রচারণার ১২তম দিনে ডেমরা থানার বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। এখানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ, নবীউল্লাহ নবী বক্তব্য রাখেন।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইশরাক হোসেন বলেন, আমার বাবা মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অস্ত্রহাতে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তৎকালীন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন চালিয়েছেন। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছেন। আমি সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ‘আমার কোনো রাষ্ট্রীয় শক্তি নাই, পুলিশি শক্তি নাই। আমার শক্তি হচ্ছে জনগণ। আমি আপনাদেরকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। প্রয়োজনে জীবন দিব, মরতে হয় মরবো, রক্ত ঝরাতে হলে ঝরাবো।
আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সাদেক হোসেন খোকা যাত্রাবাড়ী এলাকায় যুদ্ধের সময় গুলি খেয়েছিলেন। জনগণের অধিকার আদায়ে তিনি রক্ত ঝরিয়েছেন। আর আমি ইশরাক সেই বাবার সন্তান। আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না। মিথ্যা মামলায় আটক বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার যে আন্দোলনে আমরা শরিক হয়েছি সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’
সকাল সাড়ে দশটায় ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার হোসেন প্লাজা মার্কেটের সামনে পথসভার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
হোসেন মার্কেটের এই পথসভা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দলে দলে শ্রমিক-জনতা সমাবেশে অংশ নেয়।
মিছিলে মিছিলে সমগ্র এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। বিভিন্ন বয়সি নারী ভোটাররা রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগত জানান। বাড়ির ছাদে, বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নারী-শিশুরাও ফুল দিয়ে বরন করেন তাকে। এছাড়া বেশ কয়েক জায়গায় তাকে ফুলের মালা পড়িয়ে দেন ধানের শীষের সমর্থক নারীরা। হোসেন প্লাজা মার্কেট সংলগ্ন প্রতিটি রাস্তা, সড়ক-মহাসড়ক ও অলি-গলিতে ছিল নারী-পুরুষের মিছিল আর মিছিল। অনেকের হাতে ইশরাকের ছবি ও ধানের শীষের প্রতীক সংবলিত প্লাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। এসময় এক পথিকের বক্তব্য- ‘বিশাল মিছিল দেখলাম, লোক আর লোক।’
হাত দিয়ে ইশারায় দেখিয়ে বললেন, ‘ওদিকে গেছে। ওদিকে দেখে আসলাম, ফুলের ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক মহিলা। সবার হাতে ফুল আর ফুল।’
রহিমা খাতুন (৭০) বলেন, খালেদা জিয়া একজন ভালো মানুষ। আমি সব সময় ধানের শীষে ভোট দেই। এই নির্বাচনে ভোট দিলে খালেদা জিয়া নাকি মুক্তি পাবে। এই জন্য আমি ভোট কেন্দ্রে যাবো এবং ধানের শীষে ভোট দিব।
আকলিমা আক্তার (৪০) বলেন, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক একজন তরুণ ও যোগ্য প্রার্থী। তার বাবা সাদেক হোসেন খোকা ঢাকার সাবেক সফল মেয়র ছিলেন। তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তাই তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এবার তার সন্তানকে আমরা ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিব।
এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের অগণিত নারী-পুরুষও ইশরাককে ফুলের মালা পরিয়ে দিতে দেখা যায়। অনেক হিন্দু নারী তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন।
হোসেন প্লাজা মার্কেট থেকে বাওয়ানি জুটমিল, ডেমরা থানা, ডেমরা বাজার, মালা মার্কেট ও মীর পাড়া হয়ে আবার হোসেন মার্কেট এসে জোহরের নামাযের বিরতি নেন ইশরাক হোসেন। নামাজ শেষে হাজিনগর, শারুলিয়া বাজার, মা-ম্যামোরিয়াল স্কুল রোড, আমতলা, বক্স নগর, রানি মহল ও অক্সফোর্ড স্কুল হয়ে অরবিতা কমিউনিটি সেন্টারে দুপুরের খাবার ও মধ্যাহ্ন বিরতি নেন।
বিরতির পর ৬৬ নং ওয়ার্ড, ডগাইর বাজার, বাঁশেরপুল হয়ে ৬৪ নং ওয়ার্ডে ডেমরা মেইন রোডে এসে গণসংযোগ শেষ হয়।
এ সময় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আল নোমান, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব-উন নবী খান সহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ সালাউদ্দিন আহমেদ, নুরুল ইসলাম মঞ্জু, এডভোকেট শিমুল বিশ্বাস, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, নবীউল্লাহ নবী, এসএম জিলানি, মোর্তাজুল করিম বাদরু, আবু নাসের মোহাম্মদ রাহমতুল্লাহ, তানভির আহমেদ রবিন, শরিফ হোসেনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এবং স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এখন আর মানুষের ভোটাধিকার নেই; কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে। সরকার আজীবন ক্ষমতায় থাকতেই ফরমায়েসী আদেশের মাধ্যমে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল জোর করে ক্ষমতায় থাকবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা। এ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। কোন অপশক্তির কাছে আমাদের সেই চেতনাকে বিলীন হতে দিতে পারিনা। আমরা এটা মানব না। এই দেশ আমাদের সবার। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।
তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ‘আমি যেখানে গিয়েছি সেখানেই ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার দেখেছি, মানুষের ঢল দেখেছি। ভোটবিহীন সরকারের অপশাসন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আজ সারাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তাই সরকারের কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের বিজয় ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা আগামী পহেলা ফেব্রæয়ারী বিজয় ছিনিয়ে আনার মাধ্যমে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।
এসময় হাজারো কন্ঠে স্লোগান উঠে- ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই- খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ মজলুম জনতার উপর দুঃশাসন চলছে। তিনি এই অন্যায়, অপশাসন ও স্বৈরশাসনের কবল থেকে রক্ষা পেতে পহেলা ফেব্রæয়ারী ঢাকাবাসীকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহŸান জানান।
তিনি বলেন, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার হোসেন সাবেক সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সুযোগ্য সন্তান। জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে ডেমরাবাসী ধানের শীষের সমর্থনে ইশরাক হোসেনের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন। এই পথসভার মাধ্যমে আজকে প্রমাণিত হয়েছে পুরো ঢাকার শহর ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই ধানের শীষ মার্কা জিয়াউর রহমানের মার্কা, ধানের শীষ মার্কা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মার্কা, এই মার্কা দেশনায়ক তারেক রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের।
আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি নগরবাসীর জন্য একটি বড় সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাককে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করার শপথ নিতে হবে।
CNNEWS24.COM সত্যের সন্ধানে সবার সাথে মিলে মিশে
