প্রচ্ছদ / জাতীয় / স্বাধনতার ৫০বছরে ভারত-পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের তুলনা

স্বাধনতার ৫০বছরে ভারত-পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের তুলনা

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে কটাক্ষ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন মার্কিন মদদপুষ্ট মোড়ল বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করছে বাংলাদেশ। কারণ দিন বদলে গেছে। বাংলাদেশ এখন তার সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নিজস্ব অর্থায়নে। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের। শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, বাংলাদেশ বদলে গেছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রায় সব ক্ষেত্রেই। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আর মানবিক মর্যাদায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে পুরো বিশ্বকেই। ১০ লাখ নির্যাতিত মানুষকে একসঙ্গে আশ্রয় দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। পরাজিত হয় একসময়ের সমৃদ্ধ দেশ পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানের চেয়ে এখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অনেক ক্ষেত্রে ভারতের থেকেও এগিয়ে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ ভারত-পাকিস্তানের অনেক পরে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। কিন্তু স্বাস্থ্য-শিক্ষার দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে ভারত-পাকিস্তানকে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জিডিপি ও মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। গ্রস সেভিংস জিডিপিতে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের চেয়েই এগিয়ে বাংলাদেশ। শিশুমৃত্যুর হারের ক্ষেত্রেও ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষে। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভারত পাকিস্তানের তুলনায় অনেক উচ্চতায় বাংলাদেশ। জন্মহার নিয়ন্ত্রণেও প্রতিবেশীদের ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। গড় আয়ুর ক্ষেত্রেও ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

শুধু প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নয়, বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কাছে রীতিমতো রহস্য। নানা দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। প্রতিনিয়তই মিলছে তার স্বীকৃতি। স্বল্প সময়ের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পোশাক রপ্তানি খাতে ঈর্ষান্বিত অনেক উন্নত রাষ্ট্রও। খোদ জাতিসংঘ এখন বিভিন্ন সদস্য দেশকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলছে। স্বাস্থ্যসেবায় কম বরাদ্দ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যাপক দারিদ্র্য সত্ত্বেও গত চার দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যতিক্রমী। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জীবন রক্ষা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের সাফল্যের কাহিনী উল্লেখযোগ্য। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সরল স্বীকারোক্তি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের।

জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলের স্থানে পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ শুধু সবার ওপরে নয়, বাংলাদেশ অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। জাপানের মতো দেশও এখন বাংলাদেশের পেছনে।
কোথায় নেই মেইড ইন বাংলাদেশ : বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক (গার্মেন্ট) শিল্প। পৃথিবীতে এখন এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পোশাক পাওয়া যায় না। গার্মেন্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধ এখন ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশীয় ওষুধশিল্প কারখানাগুলো দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ ওষুধ জোগান দিচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ জীবন বাচাচ্ছে বিশ্বের আনাচে-কানাচের মানুষের। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশে পরিণত করেছে। বাংলাদেশি তরুণ-যুবারাই তৈরি করছে বিভিন্ন দেশের গর্বের কাঠামো, ঘুরিয়ে দিচ্ছে তাদের অর্থনীতির চাকা। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানও অগ্রগণ্য। যুদ্ধবিগ্রহের বিশ্বকে ব্লু হেলমেট মাথায় দিয়ে বুক আগলিয়ে রক্ষা করছে বাংলাদেশের দুর্বার সেনারাই।

বহির্বিশ্বে প্রতিশ্রুতিময় ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র : ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক পরিধি বৃদ্ধির আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও দিন দিন বাড়ছে বাংলাদেশের গুরুত্ব ও মর্যাদা। সব পরাশক্তিই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশিদের ক্রয় ক্ষমতাও বাড়ছে দিন দিন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি বড় বাজারও হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার চালকে আসনে জায়গা করে নিয়েছে। ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ এখন নীতিনির্ধারণী অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বিমসটেক, ডি-৮, ওআইসি, ন্যামসহ বিভিন্ন ফোরামে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে একটি প্রতিশ্রুতিময় ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

মানবিক মর্যাদায় ছাড়িয়ে গেছে পুরো বিশ্বকেই : মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে পুরো বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের এই ঢল নামলে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে এক নতুন মানবিক পরিচয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা আসছে এখনো। আজকের বিশ্বে এত বিপুলসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও জায়গা পেত কি না তা নিয়ে সংশয় আছে সবারই।

 

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন।

এছাড়াও চেক করুন

শান্ত–তানজিদ বিশ্বকাপের খেলোয়াড়ই নন

২০২৩ বিশ্বকাপে ব্যাটিং ব্যর্থতা যেন বাংলাদেশকে কিছুতেই ছাড়ছে না। শুরুতে বাংলাদেশের টপাটপ উইকেট হারানো হয়ে …