প্রচ্ছদ / প্রচ্ছদ / একটুকরো কাগজে লেখা ছিলো – আমি বাঁচতে চাই

একটুকরো কাগজে লেখা ছিলো – আমি বাঁচতে চাই

গাজী ফরহাদ

নাদিয়াদের বাড়ি আর আমাদের বাড়ির দূরত্ব মাত্র কয়েক সেকেন্ডের , নাদিয়াদের বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ শুনে দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি নাদিয়া পাখার সাথে ঝুলে আছে, তারমানে আত্মহত্যা করছে।

হঠাৎ আত্মহত্যা কেনো করলো মেয়েটা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। এইদিকে সকলের কান্নার আওয়াজে এলাকা থর থর করে কাঁপছে।

মেয়েটা যথেষ্ট ভালো ছাত্রী ছিলো , এই ভালো ছাত্রী এত বড় একটা বোকার মতো কাজ করবে তা কখনো কেউ ভাবতে পারেনি, স্বয়ং আমি নিজেও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

অতীতে আত্মহত্যা যারা করেছে তারা অনেকে কাগজে কিছু একটা লিখে গিয়েছে নয়তো কিছু রেখে গিয়েছে । খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলাম । অবশেষে টেবিলের উপরে একটি আলাদা করা বইয়ের ভিতর থেকে ছোট্ট একটা কাগজের টুকরো পেয়েছি ৷
যেখানে লেখা ছিলো — আমি বাঁচতে চাই ৷

আরও কিছু আছে ভেবে খুঁজাখুঁজি শুরু করে দিলাম, নাহ্ আর কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।

১৬ বছরের নাদিয়ার মাথায় আত্মহত্যার বিষয়টি কীভাবে আসলো তা ভাবছি । বয়সে আমাদের থেকে অনেক ছোট মেয়ে।

কাগজের টুকরোর লেখাটার কথা বারবার ভাবছি , নাদিয়ার কী এমন সমস্যা ছিলো যে সে – আমি বাঁচতে চাই, লেখাটা লিখে আত্মহত্যা করতে হয়েছিলো। সে কী বেঁচে ছিলো না ?

কয়েকদিন আগে শুনেছিলাম তার মা-বাবা বিয়ে করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যেখানে মুরুব্বিদের মতে সে এখনো বাচ্চা ।

আমি বিয়ের কথাটা শুনেছিলাম, তবে পাত্তা দিনাই ! আমি মনে মনে ভেবেছি নাদিয়া খুব ভালো ছাত্রী সে নিশ্চিত এই অল্প বয়সে বিয়েতে মত দিবে না। ঠিক তাই হলো মত দেয়নি নাদিয়া।

বিয়েতে নাদিয়ার মত নেওয়ার জন্য নাকী তার মা-বাবা অনেক অত্যাচার করতো সেদিন খাবার টেবিলে বসে মায়ের কাছে শুনেছিলাম।

নাদিয়ার মা-বাবা মনে করেছিলো, আরেকটু বড় হলে সে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেলে মা-বাবার মান-মর্যাদা সব ডুবে যেতো এই ভেবে তারা বিয়ে করানোর জন্য সব সময় নাদিয়াকে বিয়ের জন্য চাপ দিতো।

অল্প বয়সের এই মেয়েটি মা-বাবার কাছে যেনো ভারী বস্তুতে রূপান্তরিত হলো।

নাদিয়ার আত্মহত্যার ব্যাপারে আরও কিছু জানার জন্য তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সায়মার সাথে যোগাযোগ করি।

সায়মার কথা অনুযায়ী নাদিয়া বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করেছিলো, অল্প বয়সের বিয়েকে নাদিয়া সমর্থন করে না।
তার মা-বাবাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েছে ১৮ বছরের পর সে নিজে বিয়ে করতে রাজি হবে। কিন্তু পরিবারের এত ঝড় নাদিয়া সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে হয়তো।

আজ নাদিয়ার লাশের পাশে বসে কান্না করতে করতে জ্ঞান হারাচ্ছে তার মা-বাবা। আজ যদি তারা ঠিক ২ বছর অপেক্ষা করতো তবুও তাদের আদরের কন্যাটা বেঁচে থাকতো। দুইবছর পর নাদিয়া কান্না করতো সে মা-বাবাকে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবে বলে কিন্তু আজ নাদিয়ার মা-বাবা কান্না করছে নাদিয়া কে চিরতরের জন্য মাটির ঘরে রেখে আসবে বলে৷

আত্মহত্যা করে কোনো কিছুর সমাধান হয়না, সমাধান হয়ে যায় নিজের মৃত্যুটা ৷

( বাল্যবিবাহ বন্ধ হোক , সমাজের সমাজপতিরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য জেগে উঠুক । বাল্যবিবাহ কখনো একটি মেয়ের জন্য সুখর নয় )

[ কাল্পনিক ]

লেখক _ গল্পকার |
gaziforhad.gf@gmail.com

এছাড়াও চেক করুন

রাজনৈতিক মামলায় পলাতক সৈয়দ মো: ওবায়েদ উল্যাহ

ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের দক্ষিন খাসেবাড়ী মোস্তাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মো: ওবায়েদ উল্যাহ পিতার- …