মাইনুদ্দিন পাঠান (সিএন নিউজ২৪.কম, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি) ।
ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের বিজ্ঞানী হয়ে উঠার পিছনে রয়েছে হতাশা আর সীমাবদ্ধতার দেয়াল ভেঙ্গে সামনে নিরন্তর ছুটে চলার গল্প।
তিনি ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় উপকূলের জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ শুরু করেন।
সেসময় নিজ দেশে পলিকীটের নমুনা সনাক্ত করার কোনো যন্ত্র না থাকায় নিজ খরচে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন যে একই নমুনা এর আগেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে সফলতার মুখ দেখেননি তিনি।
এরপর ২০১০ সালে পোস্ট গ্রাজুয়েট করতে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যান ।ডিগ্রি শেষে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন। আর এখানকার শিক্ষার্থীদের উপকূলীয় অঞ্চলে গবেষনায় সহযোগিতা করার সময় তিনি নতুন ‘নেফটাইস বাংলাদেশী’ নামক পলিকীটটির সন্ধান পান এবং ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এর নমুনা জমা দেন ও সফলকাম হন।
এছাড়া, তিনি ব্রুনাই সমুদ্র এলাকা থেকে victoriopisa bruneiensis নামে আরো একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। প্রজাতিটির সংগ্রহের স্থান ব্রুনাই এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় victoriopisa bruneiensis। এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়ের ‘ব্রুনাই নদীর’ মোহনা থেকে আবিষ্কার ‘ভিক্টোরিওপিসা ব্রুনেইসিস’কে আর্থোপোডা পর্বের অ্যামফিপোডা (Amphipoda) বর্গের এবং ভিক্টোরিওপিসা (Victoriopisa) গণভুক্ত প্রজাতি বলে উল্লেখ করেছেন সমুদ্র বিজ্ঞানী ড. বেলাল। এই অবদানের কারনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
ড. বেলাল ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিনি ও ছাত্র সাইফুল নোয়াখালীর বিভিন্ন পুকুর, খাল ও নদী থেকে মাইটসের নমুনা সংগ্রহ করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে প্রাথমিক শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করেন। চূড়ান্ত শনাক্তকরণের জন্য মাইটসের নমুনাগুলো মন্টেনেগ্রোতে ড. ভ্লাদিমিরের কাছে পাঠানো হয়। তিনি নমুনাগুলো চূড়ান্তভাবে শনাক্ত করেন। নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতি দু’টির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভের জন্য গবেষণার ফলাফল লন্ডন ও নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী Systematics and Applied Acarology তে পাঠানো হয়। যা ২০১৮ সালের মে মাসের ১৫ তারিখে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র বিজ্ঞানী যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পূর্ণ নতুন দুইটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সন্ধান দিলেন। নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকা থেকে পাওয়া ‘নোবিপ্রবিয়া’ ও ‘অ্যাররেনারুস স্মিটি’ নামে নতুন দুটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে ‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ নামটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নাম থেকে করা হয়েছে। আর ‘অ্যাররেনারুস স্মিটি’ নামে অমেরুদণ্ডী প্রাণীটির নামকরণ করা হয় নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত একারোলজিস্ট হ্যারি স্মিথের নামে।
ড. বেলাল হোসেন বলেন, আমি কাজ করি মূলত এক্যুয়েটিক (জলীয়) ইকো সিস্টেম নিয়ে, এক্যুয়েটিক ইকো সিস্টেম এ সবচেয়ে নিচের স্তরের প্রাণী হলো ব্যাক্টেরিয়া আর উপরের স্তরের প্রাণী বলা যায় মাছ। এরা একে অপরের উপর খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার কেন্দুয়া গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহান ভূইয়া ও দেলোয়ারা বেগমের ছেলে ড. বেলাল হোসেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে স্নাতক, যুক্তরাজ্যের হাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং ব্রুনাই দারুসসালাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।
CNNEWS24.COM সত্যের সন্ধানে সবার সাথে মিলে মিশে
