প্রচ্ছদ / কুমিল্লা ও নাঙ্গলকোট / জুলিয়াছ বাহিনীর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত নাঙ্গলকোটের মানুষ

জুলিয়াছ বাহিনীর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত নাঙ্গলকোটের মানুষ

নাঙ্গলকোট সংবাদদাতা

আবু সুফিয়ান জুলিয়াছ

আবু সুফিয়ান জুলিয়াছ। এলাকার মানুষের কাছে তিনি জুলিয়াছ বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত। জুলিয়াছ কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়কের পদে ছিলেন। এই যুবলীগ নেতা ও তার বাহিনীর ভয়ে এলাকার মানুষ তটস্থ।

স্থানীয়দের দাবি, সম্প্রতি গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় আলোচনায় আসা নোয়াখালীর দেলোয়ার বাহিনীর চেয়েও ভয়ংকর জুলিয়াছ বাহিনী। জুলিয়াসের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। ভুক্তভোগীদের দাবি, এমন কোনো অপরাধ নেই, যা জুলিয়াছ ও তার বাহিনীর সদস্যরা করেনি। তার বিরুদ্ধে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, মানুষকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পঙ্গু করা, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, নারী নির্যাতন, অপহরণ, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় থানায় অথবা আদালতে মামলা হলেও জুলিয়াছ সেই মামলা অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রত্যাহার করে নেয় বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন আবু সুফিয়ান জুলিয়াছ। এখনও ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়কের পদে আছেন দাবি করে তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, এসব ঘটনায় তিনি জড়িত নন। তিনি এখন এলাকার বাইরে রয়েছেন, এলাকায় যেন যেতে না পারেন সে জন্যই এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সামনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

জুলিয়াছ আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের তুগুরিয়া গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে।

তুগুরিয়া গ্রামের আনা মিয়ার ছেলে সফিউল হক বলেন, ২০১৩ সালে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জুলিয়াছ দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় সে আমাকে ও আমার ভাই ছেরাজুল হককে তুগুরিয়া ব্রিজের ওপর অস্ত্র ঠেকিয়ে তার লোকজনসহ কোপাতে থাকে। পরে আমরা গুরুতর আহত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিই। এর কিছুদিন পরই ভাই মারা যায়। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করি। তবে তাদের ভয়ে কেউ ওই মামলায় সাক্ষ্য দেয়নি। তার নেশাই হলো চাঁদাবাজি করা, আর চাঁদা না পেলে মানুষকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া। এ গ্রামেরই কমপক্ষে ২০ জনকে পঙ্গু করেছে সে। কেউ তার ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না।

ওই গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আবদুর রহমান খোকন বলেন, চাঁদার জন্য জুলিয়াছের নেতৃত্বে বাড়িতে হামলা হয় ২০১৭ সালে। আমিসহ পরিবারের পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তারা কুপিয়ে আমার পা ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় আমার ছেলে আদালতে মামলা করে। ওই মামলায় পিবিআই তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। এরই মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে সে আমার ছেলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করে।

আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান হোসেনের ছেলে ফাহিম হোসেন বলেন, জুলিয়াছ এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য এসব ঘটনা ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। সে ২০১৯ সালের মার্চে আমাকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে ফেলে। এখনও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছি না।

তুগুরিয়া গ্রামের মজিবুল হকের ছেলে আবদুল মন্নান বলেন, জুলিয়াছ ও তার বাহিনীর সদস্যরা আমার মেয়েকে গত ১৮ জানুয়ারি অপহরণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করে সুবর্ণচর থেকে মেয়েকে উদ্ধার করি। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৬ জুলাই সে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু চাঁদা না দেওয়ায় সে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পিটিয়ে আহত করে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানেও হামলা করে সে। মামলাটি বর্তমানে ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

মনোহরগঞ্জের উত্তর হাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরন বলেন, জুলিয়াছ ও তার বাহিনীর সদস্যরা ছয়-সাত মাস আগে চাঁদার জন্য তুগুরিয়া এলাকায় আমার গাড়িতে হামলা করে। এ ঘটনায় নাঙ্গলকোট থানায় মামলা করেছি। তুগুরিয়া গ্রামের মাহফুজুল হক বলেন, বাজারে আমার হার্ডওয়্যার দোকানে চাঁদার জন্য দু’বার হামলা করেছে জুলিয়াছ। এরপর চাঁদার জন্য আমার বাড়ির সামনে আমাকে পিটিয়েছে। তার ভয়ে মামলা করতে পারিনি। একই গ্রামের বোরহান উদ্দিন বলেন,  জুলিয়াছ ও তার বাহিনীর সদস্যরা ২০১৯ সালে আমার ভাই সাইফুল ইসলামকে অযথা পিটিয়ে কোমর ও মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। সে এখন বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

একই গ্রামের সেলিম বলেন, আমার শ্বশুর প্রায় সাত বছর আগে মারা গেলে জুলিয়াছ বাহিনী তুগুরিয়া বাজারে তার দুটি দোকান দখল করে নেয়। তাদের ভয়ে কোনো কথা বলতে পারছি না। গ্রামের মেম্বার জসিম উদ্দিন বলেন, জুলিয়াছ বাহিনী আমারও একটি দোকান দখল করে নিয়েছে। এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করে না। তার কাছে নোয়াখালীর দেলোয়ারও কিছু না।

সাবেক মেম্বার এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমার বয়স ৮০ বছর, সে আমাকেও মেরেছে। স্ত্রীকে পিস্তল ঠেকিয়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা নিয়েছে। সে এলাকায় মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা করে। তার ভয়ে কেউ কথা বলে না।

মনোহরগঞ্জের উত্তর হাওলা গ্রামের এক নারী বলেন, সে আমাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিত। এতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় এসপি অফিসে অভিযোগ করেছি। আদ্রা দক্ষিণের লুদুয়া গ্রামের আবুল বাশার বলেন, বাড়িতে বিল্ডিং করার সময় সে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ভাতিজা ওমরকে পিটিয়ে আহত করে। আদ্রা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানুষকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলার বিভিন্ন অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার আরও অনেকেই জানান, জুলিয়াছ বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ এলাকায় থাকতেও ভয় পায়। এত অপরাধ করেও সে বীরের মতো ঘুরে বেড়ায়। প্রশাসনও তাকে কিছুই বলে না। তার বাহিনীর অন্যতম সদস্য হলো- বাবলু, শিপন, সোহেল, জামাল হোসেন, নিজাম, মেহের ও কামাল হোসেন।
জেলা ডিবি পুলিশের এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, জুলিয়াছসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হওয়া একটি চাঁদাবাজির মামলা আমরা তদন্ত করছি। শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র আবদুল মালেক বলেন, জুলিয়াছের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আসায় তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সে এখন যুবলীগের কেউ নয়। দলীয় পরিচয়ে অপরাধ করার কোনো সুযোগ নেই।

সূত্রঃ সমকাল

এছাড়াও চেক করুন

রাজনৈতিক মামলায় পলাতক সৈয়দ মো: ওবায়েদ উল্যাহ

ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের দক্ষিন খাসেবাড়ী মোস্তাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ মো: ওবায়েদ উল্যাহ পিতার- …