নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে দলটি। গতকাল রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পাশে ঈদগাহ রোডে বিভাগীয় মহাসমাবেশে এই আহবান জানান বিএনপির নেতারা। এই সময় নেতারা বলেন, এই সরকারে কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে লাভ নেই। তাকে মুক্ত করতে হলে রাজপথে নামতে হবে। আর দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর যখনই আন্দোলনের ডাক আসবে ঠিক তখনই এই সংগ্রামে সবাইকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে নেত্রী গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার জন্য, এই দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বার বার সংগ্রাম করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, সেই নেত্রী আজকে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগামে ৭৫ বছর বয়সে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্টে বন্দি রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এতোটাই অসুস্থ যে হেঁটে বাথরুমে যেতে পারেন না। নিজ হাতে খেতে পারেন না। তাকে দুইজনে ধরে হুইলচেয়ারে করে সবখানে নিয়ে যেতে হয়। এই আঠারো মাস ধরে তাকে টেলিভিশন দেখতে দেয়া হয় না। তাকে একটা খবরের কাগজ পড়তে দেয়া হয়। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দেখা করার কোন সুযোগ নেই। পরিবারের সদস্যরা যারা দেখা করতে যায় তাদের পনেরো দিন পরে দেখা করতে দেয়া হয়, আবার মাত্র এক ঘন্টার জন্য। আমরা দীর্ঘ আঠারো মাস ধরে তাকে মুক্ত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছি। তাকে মুক্ত করার জন্যই আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সকল প্রচেষ্ঠাকে ব্যর্থ করে দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকার দানবের মতো আমাদের বুকে ভড় দিয়ে বসে আছে।
তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশকে ঘিরে গত কয়েকদিনে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হযেছে। এই সমাবেশে আসার পর জানতে পরলাম সারাদেশের সঙ্গে রাজশাহীর যোগযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরে এসে দেখলাম পুরো শহর খালি করে রাখা হয়েছে। মনে হয়ে এখানে কার্ফিউ জারি করা হয়েছে। কোথাও কোন দোকানপাট খোলা নেই, গাড়ী ঘোড়া চলছে না, এমনকি একটি স্কুটারও চলতে দেয়া হচ্ছে না। রাজশাহীর আশে পাশের জেলাগুলো থেকে আসা বাস, নৌকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমারতো মাঝে মাঝে মনে হয় এই সরকার কে চালায়? কেন আওয়ামীলীগের মন্ত্রীরা বলছেন আপনাদের কোথাওতো কোন মিটিংয়ে বাধা দেয়া হচ্ছে না। অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনকার যারা পুলিশ প্রশাসন আছেন তারা অঘোষিত কার্ফিউ দিয়ে এই জনসভায় মানুষ আসা বন্ধ কর দিয়েছেন। আমি পথে পথে দেখলাম চেকপোস্ট দিয়েছে। সেখানে প্রত্যেকটা মানুষকে আটকানো হচ্ছে, পকেট তল্লাশি করা হচ্ছে। কি তল্লাশি করা হচ্ছে? আপনার নিজেদের খোঁজেন, নিজের দিকে তাকান, সারাদেশের মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে আপনার কি করছেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদকে উদ্দ্যেশ্য করে ফখরুল বলেন, আমাদের তথ্যমন্ত্রী সাহেব নতুন নতুন তথ্য নিয়ে এসেছেন, তিনি তথ্য দিয়েছেন এখনকার এই ক্যাসিনোর টাকা নাকি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে যায়। কি চমৎকার আবিস্কার আপনার। ক্রিয়েটিভ ইনফরমেশন মিনিস্টার। কারণ তিনি এটা নতুন করে আবিস্কার করেছেন। এই কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আপনাদের সবকিছু ফাঁস হয়ে গেছে। এতোদিন যেগুলো জোর করে আটকে রেখেছিলেন এগুলো এখন ফাঁস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে থেকে এক বছরে সাতাশ হাজার কেটি টাকা পাচার করা হয়ে গেছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় অপরাধ করেছেন অপনারা। এই দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। রাতের আধারে মানুষের অধিকার হরণ করেছেন। সব কিছু লুট করে নেয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই ভোট চুরি করে মানুষের মুখ বন্ধ করে জনগণের যে অধিকার আদায়ের আন্দোলন সেটা বন্ধ করা যাবে না। বিগত নির্বাচনের আগ থেকে ২৬ লক্ষ লোককে আসামী করা হয়েছে। এক লাখ মামলা দেয়া হয়েছে। আজকে বাংলােশর যে সকল মানুষ কোন দিন কোর্টের বারান্দায় যান নাই, তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দেয়া হয়েছে। যারা কিনা নাশকতা কি সেটাই জানেন না এবং বুঝেন না। আমাদের দলের লোকেরা কোথাও কোন প্রোগ্রাম করতে গেলে সরকারের লোকেরা বলে আমার নাকি ষড়যন্ত্র করতেছি। এই সব কথা বাদ দেন। এই দিন শেষে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, গোটা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন এখন আর জোড় করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। জনগণের অধিকার জনগনকে ফিরিয়ে দিন। আমরা এই আন্দোলন সংগ্রাম করতেছি কোন দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে দিতে চাই। এটা কি মামা বাড়ি আবদার। আমি দেশের জনগণ, আমি দেশের মালিক। কিন্তু আমার অধিকার কেড়ে নিয়ে তুমি বাইরে গিয়ে পুরস্কার নেবে জনঘনকে বোকা বানিয়ে। বাইরে পুরস্কার নিয়ে লাভ হবে না। দেশের মানুষের ভালবাসা নেয়ার চেষ্টা করেন। সেটা একমাত্র সম্ভব যদি দেশনেত্রী কে মুক্তি দেন। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে এই দেশে আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে একটি নির্বাচন দিন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে প্লেন থেকে নামার পর এই রাজশাহী শহরকে মনে হয়েছে একটি ভুতুরে শহর। কোন মানুষকে নাকি রাস্তায় নামতে দেয়া হয়নি। প্রশাসন জায়গায় জায়গায় আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দিয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজন আপনার জানেন না। এগুলো করে আপনার নিজেদের ক্ষতি করছেন। আপনারা জনগণের বন্ধু। তাই আমি আপনাদের আহবান জানাবো আপনারা জনগণের পাশে এসে দাঁড়ন।
আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা আজ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করছি। আমি মনে করি এই সমাবেশ করে কোন লাভ হবে না। এর জন্য আমাদের মাঠে নামতে হবে। সকল বাধার পাল্টা জবাব দিতে হবে। আর এই অবৈধ সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে কোন ফল হবে না। তাই আসুন আমরা এই সরকারকে হঠিয়েই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি।
সমাবেশে সভাপত্বি করেন রাজশাহী মহানগর বিএনরি সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড.শফিকুল হক মিলন। আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কর্ণেল (অব.) আব্দুল লতিফ, হাবিবুর রহমান হাবিব, এড. কামরুল মনির, বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালকদার দুলু, শ্যামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, নির্বাহী কমিটির সদস্য এড. নাদিম মোস্তফা, আবু সাইদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুরতাজুল করিম বাদরু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, মৎসজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনরি সাধারণ সম্পদক আলহাজ্জ্ব আমিনুল ইসলাম, বগুড়া জেলার আহবায়ক জিএম সিরাজ, রাজশাহী মহানগর যবুদল সভাপতি আবুল কারিম আজাদ সুইট, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রোটন, ছাত্রদল সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি, সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রিজভী আহমেদ. সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউজ্জামান পরাগ, জেলা যুবদলের সভাপদি মোসাদ্দেক জামেলী সুমন, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম সমাপ্ত, ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জনি প্রমূখ।
CNNEWS24.COM সত্যের সন্ধানে সবার সাথে মিলে মিশে