সিএন নিউজ২৪.কম, নিজস্ব প্রতিবেদক ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাইরে না থাকায় দেশে আজ স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার যশোরে বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপি কর্তৃক জেলা পারিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগাম খালেদা জিয়া আজ নেই বলে ফেনী নদীর পানি অবলীলায় চলে যায়। কিন্তু তিস্তা নদীর পানি আমরা পাই না। তিনি নেই বলে ভারতের রাডার বসানো হয়। কিন্তু এটা দিয়ে কি হচ্ছে সেটা আমরা জানি না। তিনি নেই বলেই এলজি গ্যাস আমদানি করে প্রতিবেশী দেশে রপ্তানিকরার আমরা সিদ্ধান্ত নেই। তিনি নেই বলেই আজ আমার দেশের স্বাধীনতানেই। বাক স্বাধীনতা নেই। সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা নেই। কেউ কোন কথা বলতে পারে না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যারা জীবন উতসর্গ করেছেন তাদর মধ্যে তরিকুল ইসলাম একজন। তিনি সারাদেশের মানুষের কাছে একজন বরেন্য নেতা। তরিকুল ভাইয়ের জানাজায় আমি আসতে পারিনি। উনার কবরে মাটি দিতে পারিনি। এটা আমার সারা জীবনের দুঃখ। আমরা এক সাথেই রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু করেছিলাম। স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে, একটা সুস্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে আমরা তরিকুল ইসলামের সহযোগী ছিলাম। আমি মধ্যে দিয়ে রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে সড়েছিলাম। কিন্তু তিনি সারাটাজীবন রাজনীতির মধ্যে ছিলেন। তিনি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। যার সবকিছুতেই ছিল রাজনীতি। সত্যিকার অর্থে একজন অনুকরনীয় নেতা ছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি অকুতোভয়ে সত্যা কথা বলতে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কখনোই দ্বিধায় ছিলেন না। কিন্তু শেষ বয়সে অসুস্থ শরীরে এসে তাকে বিভিন্ন মামলার হাজিরা দিতে যশোর-ঢাকা যশোর ছুটোছুটি করতে হয়েছে। একজনের মুত্যুর স্মরণ সভা করতে এসে আরেকজনরে মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম। আমাদের আরেক সহযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা মারা গেছেন। এ যেন এক মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। এই সরকার আসার পর থেকে বিগত বারো বছরে অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ণে আমাদের একেকজন প্রজ্ঞাবান নেতা চলে যাচ্ছেন। এই চলে যাওয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখতে হবে। এই চলে যাওয়ার মধ্যদিয়ে তাদের পথ অনুসরণ করে আগামীর সূর্যকে উঠতে দেখতে হবে।
খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, একটি মিথ্যা মামলায় আমাদের নেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সারাদেশে এই আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের ফলে ২৬ লক্ষ মানুষ আসামী। পাঁচশ’র উপরে আমাদের নেতাকর্মী গুম হয়েছে। সেই নির্যাতনের কথাতো আমরা ভুলতে পারি না। এই একটা ভয়াবহ দুঃশাসনের পাথর আমাদের উপর চেপে বসেছে। এই পাথরকে আমাদেরই সড়াতে হবে। অন্য কেউ এসে এটা সড়িয়ে দেবে না। বাংলাদেশের মানুষকেই এবং বিএনপিকেই এই পাথরকে সড়াতে হবে। আমরা একটা কথা আজ পরিস্কার করে বলতে চাই, এই সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। সেটি পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক ইতিহাসে নেই। জবরদস্তি আর বন্দুকের নল দিয়ে টিকে থাকা যায় না। এই দেশের মানুষের মন থেকে তারা হারিয়ে গেছে। দেশের প্রতিটি মানুষ দোয়া করছেন কবে এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাবেন। তাই আর পেছনে দিকে ফিরে তাকানোর সময় নেই।
বিএনপিকে খোলা মাঠে প্রোগ্রাম করতে দিতে সরকার ভয় পায় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, আজকে তরিকুল ইসলাম ভাইয়ের স্মরণসভা করা জন্য মাঠে অনুমতি দেয়া হয়নি। একটা আবদ্ধ ঘরে আমাদের প্রোগ্রাম করতে হচেছ। তারপরেও হাজার হাজর মানুষ এখানে এসেছেন। তারা মাঠে প্রোগ্রাম করতে দেয় না কারণ তারা আমাদের ভয় পায়। বিএনপিকে ভয় পায়। তারা জানে এই মানুষগুলো যদি একবার জেগে উঠে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।
দেশ আজ দূর্নীতিতে ভরে গেছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা শেষ হয়ে গেছে। শেয়ার মার্কেট শেষ হয়ে গেছে। দেশে মেগা লুট হচেছ। এটাতো সরকারের লোকেরাই স্বীকার করে নিয়েছে দুর্নীতির কথা। নিজেরাই এখন নিজেদের দুর্নীতি বের করে শুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করছে। দেশে মানুষ যানে আসল দুর্নীতিবাজ করা। কাদের নির্দেশে দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। এই চুনোপুটি ধরে মানুষকে আপনারা বোকা বানাতে পারবেন না। মানুষ আপনাদের ভাল করেই চেনে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, জনগণ আমাদের পাশে আছে। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি করতে হবে জনগণ আমাদের যেভাবে চায় সেইভাবে তাদের পাশে পাই কিনা। যদি না পায় তাহলে আমাদের জনগণের পাশে থাকার সেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। শহীদ জিয়ার ডাকে জনগণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তখনো কিন্তু আদালত ছিল সুতরাং ওই যে আদালত যে তখন ৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল মানল না তার জন্য আদালত কিন্তু ইয়াহিয়া খানকে বলে নাই এটা বেআইনি, ক্ষমতা হস্তান্তর করো। সুতরাং আজকের আদালত আদালতের জায়গায় নেই। আজকের আদালত প্রধানমন্ত্রীর কব্জার মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে কারো মুক্তি হয়। না চাইলে মুক্তি হয় না।
পুলিশ প্রসাশনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সরকার তাদের নিজেদের ক্ষমতা টিকানোর জন্য ৩০ তারিখের নির্বাচন ২৯ তারিখ রাতেই সম্পন্ন করে ফেলেছে। আজ আমরা আসার পর পুলিশ প্রশাসন আমাদের দুর্বিন দিয়ে দেখছে। একটা সময় আসবে জনগণ তাদের দূরবীণ দিয়ে দেখবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্পষ্টবাদী হওয়া একজন রাজনীতিবিদের জন্য খুব কঠিন। কারন একজন রাজনীতিবীদ স্পষ্টবাদী হলে তার শত্রæ বাড়ে। তবে তিনি এসবের তোয়াক্কা করেতেন না। মরহুম তরিকুল ইসলাম এই গুনের অধিকারি ছিলেন। এর চাইতে বড় গুন মানুষের হতে পারেনা। মানুষিকভাবে বিএনপিকে এগিয়ে নিতে হলে বিত্তের দুর্বিত্তায়নমূলক রাজনীতি পরিহার করে তরিকুল ইসলামের পথে হাটতে হবে।
প্রয়াত তরিকুল ইসলামের স্ত্রী যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নারগিস বেগম এর সভাপতিত্বে স্বরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সাদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান,বরকতুল্লাহ ভুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ড, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দ দাস অপু, নির্বাহী কমিটি সদস্য সাবেরা নাজমুল মুন্নি, তাতি দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার প্রমূখ।
CNNEWS24.COM সত্যের সন্ধানে সবার সাথে মিলে মিশে
৪ মন্তব্য
Pingback: briansclub
Pingback: สินค้าจีน
Pingback: รับจด อย
Pingback: OligioX ที่ไหนดี?