মাহমুদুল হাসান কবীর
বাংলাদেশে বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। গত ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরো নতুন দুইটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সভায় ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯’ ও ‘হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
সারাদেশে ৪৬ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন বেহাল দশা, নেই পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা, ক্লাস রুম সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, রয়েছে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন। এমতাবস্থায় পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচর্যা করা যথার্থ নাকি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে একই সমস্যা আরো তীব্র করা যথার্থ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে স্থাপিত হয়। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পেলেও বর্তমানে আবাসিক হলের গণ রুমে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতাদের দাপটে পঁচে মরে শিক্ষার্থীরা। জোরপূর্বক ক্লাস রেখে নিয়ে যাওয়া হয় মিটিং মিছিলে। ক্লাসে গেলেও পাওয়া যায় না পর্যাপ্ত ক্লাস রুম। আর শিক্ষার মান তা যেন উবে যাচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিয়োগ পাওয়া তুলনামূলক কম মেধাবী শিক্ষকদের মাধ্যমে।
এমন একই দশা বিরাজ করছে স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হচ্ছে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের কৃষিশিক্ষা ও গবেষণার জন্য ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে স্থাপিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীনতা উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। তারমধ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটিই দেশের সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৮০ তে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় লেখা থাকলেও চার দশক পেরিয়ে গেছে এখনো ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন।
গত পাঁচ দশ বছরের মধ্যে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেসবে নেই নিজস্ব ক্যাম্পাস, পর্যাপ্ত অবকাঠামো ও শিক্ষক। এখন শিক্ষকদের চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দিচ্ছেনা অনুমোদন। তাছাড়া বিভাগীয় সভাপতি ক্ষমতাসীন দলের না হলে নিজ দলের মনপুত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার আশায় পার করে দিচ্ছেন বছরের পর পর। এর কারণে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা না থাকায় পড়ালেখায় চরম বিঘ্নিত হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য গবেষণা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তঃসম্পর্ক না থাকা ও লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই না থাকায় তাও সুফল পাচ্ছেনা। একাডেমিক ও চাকরির পড়াশোনার সিলেবাস ভিন্ন হওয়ায় যেমনটা বাড়ছে উচ্চ শিক্ষিত বেকার তেমনিভাবে বাড়লে গবেষণা বিমুখতা। এছাড়া আবাসিক হলের অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুকিতে ভুগছে শিক্ষার্থীরা।
এমতাবস্থায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করাই যথার্থ হবে সরকারের জন্য।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
mhkabir97kd@gmail.com
CNNEWS24.COM সত্যের সন্ধানে সবার সাথে মিলে মিশে