
অভিভাবক এবং অভিভাবকত্ব দুইটি ওতপ্রতভাবে জড়িত,সাধারনত অভিভাবক বলতে আমরা বুঝি একজন সন্তানের বৈধ পিতা ও মাতাকে যারা তাদের সন্তানের দেখ ভালো করে থাকেন। একজন নারী ও পুরুষ বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে একজন সন্তানের আদর্শ অভিভাবক হয়ে থাকেন। তবে বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াও অনেকে অভিভাবক হয়ে থাকেন যেমন, দত্তক নিয়ে অভিভাবক হওয়ার রীতি ও আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চালু আছে। একজন সন্তানের পিতা ও মাতা একজন আদর্শ সন্তানের অভিভাবক। তবে মুসলিম আইনে বাবা হলেন সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক।এ আইনে মা সন্তানের অভিভাবক হতে পারেন না। তবে মা সন্তানের সন্তানের রক্ষনাবেক্ষন করতে পারেন এবং জিম্মাদার হতে পারেন। মুসলিম আইনে বাবাই একমাত্র অভিভাবক। তার মৃত্যুতে অন্য অন্য কেউ অভিভাবক নিযুক্ত হবেন তবে হা একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মা সন্তানের অভভাবক বা তত্বাবধানের অধিকারীনি কিন্তু স্বাভাবিক অভিভাবক নন।মুসলিম আইনে পিতা জীবিত থাকলে তিনিই নাবালকের শরীর ও সম্পত্তির স্বাভাবিক ও আইনানুগ অভিভাবক। নাবালকের পক্ষে কোন কাজ সম্পন্য করতে হলে পিতাকে আদালতের হুকুমের অপেক্ষা করতে হয় না।
আমাদের আজকের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে অভিভাবকত্ব নিয়ে আইন কি বলে।
অভিভাবকত্বঃ-
অভিভাবকত্ব বলতে বুঝায় নিজের দেখাশোনা বা পরিচালনা করতে অপারগ এমন কোন ব্যক্তিকে বা তার সম্পত্তির বা উভয়ের তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা বা অধিকার, যেমন নাবালক,উন্মাদ ও অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিরা যারা নিজের দেখাশোনা করতে পারে না।তবে উল্লেখ্য,নাবালক বলতে সেই ব্যক্তিকে বুঝাবে যার বয়স আঠারো বছর পূর্ণ হয় নাই।নির্বোধ, উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখা গণ্য নয়।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ সনের আইন অনুযায়ী অভিভাবকত্ব দুই প্রকারঃ-
১/ সন্তানের অভিভাবকত্ব
২/সন্তানের সম্পত্তির অভিভাবকত্ব
আলোচনার সুবিধার্থে আমাদের আবারো অভিভাবকের কিছু বিষয় তুলে দরতে হবে যা আমরা পূর্বেই আলোচনা করে আসছি।
★কারা সন্তানের অভিভাবক হতে পারবেন?
মুসলিম পারিবারিক আইনে বাবা হলেন সন্তানের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক। স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে বা কারো মৃত্যু হলে সাধারণত সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আদালতে মামলা -মোকদ্দমা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে মা সাত বছর পর্যন্ত পুত্র সন্তানকে ও বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত কন্যা সন্তানকে কাছে রাখতে পারেন, আইনের ভাষায় মায়ের এই অধিকারকে বলে “হিজানা ” বা জিম্মাদারিত্ব এবং মা কে বলা হয় জিম্মাদার।তবে মা যদি দ্বিতীয় বিবাহ করে সেই ক্ষেত্রে মা জিম্মাদারিত্বের অগ্রাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।তবে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় যদি কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ওই সন্তানের ওপর মায়ের জিম্মাদারিত্ব যথার্থ বিবেচিত হয় তাহলে আদালত মা কে ওই সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন।
এখন আসুন যেনে নেই, সন্তানের মা ছাড়াও অন্য কারা নাবালকের জিম্মাদারিত্বের অধিকার লাভ করতে পারেন?
যখন কোন নাবালকের মা মারা যায় বা অন্য কোন কারনে নাবালকের জিম্মাদারিত্বের অধিকার হারিয়ে ফেলে, সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত মহিলা আত্নীয়রা নাবালকের জিম্মাদারিত্বের দায়িত্ব পাবেনঃ-
(১)মা -এর মা যেমন, নানী
(২)বাবার-মা যত উপরের দিকে হোক, যেমন, দাদী,দাদীর মা প্রমুখ
(৩)পূর্ণ বোন -আপন বোন
(৪)বৈপিত্রিয় বোন
(৫)পূর্ণ বোনের কন্যা, যত নিচের দিকে হোক
(৬)বৈপিত্রিয় বোনের কন্যা
(৭)পূর্ণ খালা
(৮)বৈপিত্রিয় খালা
(৯)পূর্ণ ফুপু -বাবার আপন বোন
মা ও মাতৃস্থানীয় আত্মীয় ছাড়া আর কারা নাবালকের জিম্মাদারের অধিকার লাভ করতে পারেন?
উপরে বর্ণিত নারীরা না থাকলে নাবালকের যারা অভিভাবক হতে পারেন তারা জিম্মাদারিত্বেরও অধিকার পাবেন,যেমন-
১/বাবা
২/নিকটতম দাদা
৩/আপন ভাই
৪/আপন ভাই এর পুত্র
৫/রক্ত সম্পর্কীয় ভাই এর পুত্র
৬/উত্তরাধিকারে বাবার বংশের সমান শ্রণীভুক্ত অন্যান্য আত্মীয়রা, যেমন-চাচা
বাবা ছাড়া অন্য কারা নাবালকের অভিভাবকত্বের অধিকার লাভ করতে পারেন?
মুসলিম আইন অনুযায়ী মা যদিও স্বাভাবিক অভিভাবক নন কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মা অভিভাবকত্বের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন, যেমন- মা যদি দেখেন সন্তানের প্রকৃত অভিভাবক যিনি, তিনি সন্তানকে ঠিকমত দেখাশোনা করছেন না বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন সেইক্ষেত্রে মা নিজ সন্তানের প্রকৃত কল্যাণের জন্য তার কাছে সন্তান থাকা উচিত মর্মে অভিভাবকত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আদালতের দারস্ত হয়ে আদালতে অভিভাবকত্বের আবেদন করতে পারেন।
পুত্র সন্তানের সাত বছর পূর্ন হলে এবং কন্যা সন্তান বয়ঃসন্ধিকালে পৌছালে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা অভিভাবকত্বের অধিকার পেতে পারেনঃ-
১/ জন্মদাতা পিতা
২/পিতা কর্তৃক সম্পাদিত উইলে সন্তানের অভিভাবকত্ব যে ব্যক্তিকে দেয়া হয়েছে
৩/দাদা
৪/আপন ভাই
৫/রক্ত সম্পর্কীয় ভাই
৬/আপন ভাই এর পুত্র
৭/রক্ত সম্পর্কীয় ভাই এর পুত্র
৮/বাবার আপন ভাই এর পুত্র
৯/বাবার রক্ত সম্পর্কীয় ভাই এর পুত্র।
তবে যেক্ষেত্রে এরকম কোন আত্মীয় নেই সেই ক্ষেত্রে আদালত তার স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতাবলে যে কাউকে বা যাকে উপযুক্ত মনে করবে তাকে নাবালক,নির্বোধ,উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তির অভিভাবক নিয়োগ করতে পারেন।
আদালত কেন অভিভাবক নিয়োগ করবেন?
যদি কোনো নাবালকের স্বাভাবিক অভিভাবক থেকে থাকে তবে আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিয়োগের প্রয়োজন নেই।তবে স্বাভাবিক অভিভাবক যদি তার দায়ত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বা তাদের মৃত্যু হলে অভিভাবকত্বের অধিকার দাবি করে একাধিক আবেদন পত্র জমা হয়, তখন আদালত সমগ্র পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও যাচাইবাচাই শেষে নাবালকের কল্যাণের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত ব্যক্তিকে অভিভাবক নিয়োগ করেন।।
এই হল আমাদের সাধারন অভিভাকত্বের আইনত নিয়ম কানুন।
তবে একজন সন্তানের সম্পতির অভিভাবক ও বিয়ের ব্যাপার কে অভিভাবক হবেন সেই বিষয় নিয়ে ও বিশদ আলোচনা রয়ে গেছে যা একজন অভিভাবকের জানা একান্ত জরুরী। যা আগামী পর্বে বিস্তারিত আকারে তুলে ধরার চেস্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি।
অভিভাবকত্ব বিষয়ে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে থাকলে
কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন.
লেখক- এড.এইচ.এম.এম. মহিবুল হক মুন্সী
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
এম হক এন্ড এসোসিয়েটস
চেম্বারঃ২০/২ রাজার দেউরী
রুম নং-২০১,জজ কোর্ট ঢাকা,
ফোন-+8801956448851
CNNEWS24.COM সত্যের সন্ধানে সবার সাথে মিলে মিশে